ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক বিদেশিকে হন্য হয়ে খুজছে আইন-শৃংখলা বাহিনী

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার :: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সরকারি অনুমতি ছাড়াই দেশি-বিদেশি এনজিও এবং বিদেশি লোকজনের কাজকর্মে বেহাল অবস্থা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে কোনোরকম সরকারি অনুমতি বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ক্যাম্প এলাকায় ফ্রি-স্টাইলে কাজ করা এনজিও এবং ব্যক্তিও রয়েছে অনেক।

সেই সাথে অনেক সন্দিগ্ধ ব্যক্তিও দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে কাজ করছে গোপনে। এমন একজন সন্দিগ্ধ বিদেশি ব্যক্তিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন-শৃংখলায় নিয়োজিত সদস্যরাসহ গোয়েন্দারা হন্য হয়ে খুঁজছেন। কিন্তু তাঁর সন্ধান মিলছে না।

জানা গেছে, বিদেশি ওই ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেখা গেছে। এতদিনেও তিনি সন্দেহের উর্ধ্বে ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক পোশাক পরিহীত অবস্থায় অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র হাতে তার (বিদেশী) একটি ছবি আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর হাতে আসার পর তোলপাড় শুরু হয়। গত ক’দিন ধরে এই বিদেশির সন্ধান নেয়া হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন-‘তাঁর ছবি দেখে মনে হয়েছে তিনি রোহিঙ্গা বা আমাদের দেশের বাসিন্দা নন। আবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আমাদের অনেক লোকজনের সাথে একজন এনজিও কর্মীর ছদ্মাবরণে তার ছবি রয়েছে।’ তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবিরেও এরকম একজন সন্দিগ্ধ বিদেশি ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নানা কথা চাওর রয়েছে। তবে এই ব্যক্তি অস্ত্রধারী সেই সামরিক পোশাকের ব্যক্তি কিনা তা গতকাল শনিবার পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি।

রোহিঙ্গা শিবিরকেন্দ্রিক সরকারি লোকজন জানিয়েছেন, ইউনিটি ফর হিউম্যানিটি নামের একটি বিদেশি এনজিও’র সাথে এরকম এক ব্যক্তি কাজ করেছেন। উখিয়ার থাইনখালীর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই এনজিওটি কাজ করছে। যে লোকটিকে সন্দেহ করা হচ্ছে তিনি মূলত পাকিস্তানি বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন তিনি পাকিস্তান বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক। রোহিঙ্গা শিবিরে এনজিও কর্মী পরিচয়ে কাজ করতে এসে তিনি বাংলাদেশের অনেক সরকারি লোকজনের সাথেও ছবি তুলেছেন।

তাঁর মুখে দাঁড়ি, বেশ লম্বা এবং ফর্সা রংয়ের সে ব্যক্তির অস্ত্র হাতে সামরিক পোশাকের ছবিটি আফগানিস্তানে তোলা বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি ট্যুরিস্ট ভিসায় এসেছিলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তবে আফগানিস্তান থেকে এসেছিলেন কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের লম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ পরিদর্শক মো. মাঈন উদ্দিন এরকম একজন সন্দিগ্ধ বিদেশির বিবরণ দিয়েছেন।

পুলিশ পরিদর্শক জানান- ‘এমনই একজন সন্দিগ্ধ ব্যক্তি কুতুপালং লম্বাশিয়া এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেরা পেতেছিলেন। তিনি ছিলেন মিশরীয়। তার নাম আবু আবদুল্লাহ। ক্যাম্পের এক সুন্দরী রোহিঙ্গা তরুণীকে এই বিদেশী বিয়েও করেছিলেন।’

পুলিশ পরিদর্শক মাঈন আরো জানান, বিদেশি এ ভদ্রলোক ক্যাম্পের লম্বাশিয়া এলাকায় একটি মাদ্রাসা স্থাপন করেই রোহিঙ্গাদের প্রিয়ভাজন হন। মাদ্রাসাটিকে কেন্দ্র করে আবু আবদুল্লাহ নামের মিশরীয় ব্যক্তিটি রোহিঙ্গাদের ‘জামাই’ হিসাবে একপ্রকার জামাই আদরেই ছিলেন। তবে সেই সময় কোন রকমের সন্দেহের সৃষ্টি হয়নি এ লোকটিকে কেন্দ্র করে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নিয়োজিত শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয় থেকে সেই সময় বিদেশিদের বিষয়ে তেমন একটা ঘাটাঘাটি করার ব্যাপারেও একপ্রকার বারণ ছিল। তাই বিদেশিদের সন্দেহের চোখে দেখা হত না।

পরিদর্শক বলেন, এতদিন পর নানা কারনে সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় সেই বিদেশিকেও আর পাওয়া যাচ্ছে না। ওদিকে রোহিঙ্গারাও মুখ খুলছে না সেই বিদেশির সাথে বিয়ের বিষয়টি নিয়ে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদেশিদের ব্যাপারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নিয়োজিত আরআরআরসি অফিসের এমন মৌন ভূমিকার কারণে গত দুই বছরে পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়টি উল্টো পথে হেঁটেছে।

দীর্ঘ দুই বছরে বিদেশি লোকজন সরকারের অনুমতি ছাড়াই এবং অনুমতিবিহীন অগণিত এনজিওর কর্মীরা ‘তাদের হীন উদ্দেশ্য’ চরিতার্থ করার যথেষ্ট সুযোগ হাতে পেয়েছে। এসব কারণেই একে একে দুই দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনও ভেস্তে গেছে।

এসব বিষয়ে উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন-‘ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে সীমাহীন গাফেলতি করেছেন। সেই সাথে সরকারি কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা, এনজিও এবং বিদেশিদের খুশি করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার কারণেই দেশ আজ অনেক পিছিয়ে গেছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে।’

পাঠকের মতামত: